বন্দুকের ভয় দেখাও, আসো সামনা সামনি: কামালের চ্যালেঞ্জ

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ভয় দেখাও, আসো সামনা-সামনি। আমি ভয় পাই না। আমি চ্যালেঞ্জ করছি।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিনলায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয় শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।

কামাল হোসেন বলেন, যারা বলে দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে, আমি বলি তোমাদের মাথা বিভক্ত হয়ে গেছে। হুমকি দাও, তোমাদের হুমকিতে ভীত হয়ে যাব? আসো সামনা-সামনি, আমি তোমাদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।

টেবিল চাপড়িয়ে উচ্চস্বরে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে না। যারা হুমকি দাও, তোমরা কাপুরুষ।

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ভোটের অধিকার আমাদের কাজে লাগাতে হবে দেশের মালিক হিসেবে।

পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) উদ্দেশ্যে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বেআইনি আদেশ মানা অপরাধ। সাংবিধানিক কর্তব্য আপনাকে বলছে, বেআইনি আদেশ মানা অপরাধ। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছেন তারা কত বড় অপরাধী?

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ৩০ ডিসেম্বর গুণে গুণে ভোট দিয়ে আসবেন। আপনার ভোট যাতে হাইজ্যাক, জালিয়াতি করতে না পারে।

তিনি বলেন, অনির্বাচিতরা এখন দেশ শাসন করছে। এটা মেনে নিতে পারি না। আমাদের যে ঐক্য আছে, সেটা এগিয়ে নিতে হবে। কোনো স্বৈরাচার মালিকের হাতে দেশ দিব না।

ক্ষমতাসীনদের এক নেতার নাম উল্লেখ না করে কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশে কেউ প্রজা নয়, তারা নাগরিক৷ যারা প্রজার কথা বলছেন, মাথা ঠিক করে কথা বলেন। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, সেনাবাহিনীর কাছে একটাই চাওয়া, জনগণ যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারে। যদি তারা নিরাপদে ভোট দিতে পারে তাহলে ভোট বিপ্লব ঘটে যাবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কতটা দেওলিয়া হলে নায়ক-নায়িকাদের নির্বাচনের প্রচারণায় নামতে পারে। পয়সা দিতে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন, কিন্তু তাদের কথায় ভোট দিবেন না। মমতাজ জনপ্রিয় শিল্পী, কিন্ত মার্কা ছাড়া ভোটে দাঁড়ালে ৫ হাজার ভোটও পাবে না।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল খান বলেন, ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে আছে। ৬ জনকে তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ জনকে অবৈধ করা হয়েছে। আরো কয়েকজনকে অবৈধ করার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৮ আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী রইল না। সরকারকে এই ৮টি আসন উপহার দেয়া হলো।

প্রবীণ এ রাজনীতিক আরও বলেন, ১৬টি আসনে আমাদের প্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতি বেড়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর চার হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক শ গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান।

সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, সেনাবাহিনী সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে। এবার আমরা দেখতে চাই, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে আমাকে বলল, স্যার আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন। আমরা ৩০ ডিসেম্বর ফাইনাল খেলা দেখাব। তাই আমি বলি, আমাদের দাঁত কামরে সহ্য করতে হবে।

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোর ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে থাকতে হবে। ভোটের হিসাব না নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৈরি থাকুন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ আপনাকে ফাইনাল খেলা দেখাবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কারো ওপর নির্ভর না করে নিজেরা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করুন।

তিনি বলেন, ৭১ সালে সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছি। আজকের লড়াইয়েও আমাদের জিততে হবে। পরাজিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, গত রাতেও যেভাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে…। এখন আমাদের শেষ আশ্রয়ের জায়গা হচ্ছে সামরিক বাহিনী যাতে নিরপেক্ষ থাকে। তারা যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের খবর থাকবে না।

সংঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর মুস্তাহিদুর রহমান, ড্যাবের সভাপতি ডা. একেএম

আজিজুল হক, প্রফেসর ড. ছদরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ।

এ ছাড়া সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, কাদের গণি চৌধুরীও বক্তব্য দেন।

পেশাজীবী নেতা ডা. এজডেএম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন।–পরিবর্তন